এডিস মশা বিস্তার করিয়াই চলিতেছে তাহাদের ডানা। নির্বাচন ও হরতাল-অবরোধের ডামাডোলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও তাহাদের আত্মীয়স্বজনদের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমরা যেন বেমালুম ভুলিতে বসিয়াছি; কিন্তু এই আতঙ্ক এখনো দূর হয় নাই। আজও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও তাহাতে মৃত্যুবরণের সংবাদ পাওয়া যাইতেছে উদ্বেগজনকভাবে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গতকালের খবর অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছে। ইহাতে এই বত্সর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াইল ৩ লক্ষ ৭ হাজার ১৯৬ জন। নূতন করিয়া ১২ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি মোট মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়াইয়াছে ১ হাজার ৫৯৫ জন। ২০১৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইহা শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল; কিন্তু এই বত্সর গ্রামগঞ্জেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হইতেছে। ডেঙ্গু সব স্থানে ছড়িয়ে পড়লেও সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের মধ্যেও দেখা যায় নাই তেমন সচেতনতা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ না হইলে ইহার পরিস্থিতি দিনের পর দিন এত খারাপ থাকিতে পারে কি?
ডেঙ্গুর মৌসুম হইল বর্ষাকাল। সাধারণত মে-জুলাই মাসে এডিস মশার প্রজনন হার বৃদ্ধি পাইয়া থাকে; কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যাইতেছে, ডেঙ্গু অন্যান্য ঋতুতেও বিস্তার লাভ করিতেছে। বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, এই বছর আক্রান্তদের ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ ডেন-২ এবং ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ ডেন-৩ ধরনে আক্রান্ত। করোনার মতো ডেঙ্গুর এই ভেরিয়েন্ট বা ধরন পরিবর্তনও আমাদের উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিতেছে।
ইহার ফলে একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হইয়া সুস্থ হইলেও আবার একই বা অন্য ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইবার আশঙ্কা থাকিয়া যাইতেছে। প্রতিদিন ইহা লইয়া খবর প্রকাশিত হইলেও আমরা এখনো ইহা লইয়া কেবল আলোচনার টেবিলে আটকাইয়া রহিয়াছি। মাঠ পর্যায়ে সর্বাত্মক কর্মসূচি লওয়া যে জরুরি, সেই ব্যাপারে আমরা এখনো উদাসীন। এখনই এই ব্যাপারে সতর্ক না হইলে আগামী বৎসরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করিবে, বলাই বাহুল্য। তাহাতে পরিস্থিতি অধিক সংকটাপন্ন হইতে পারে। এই ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের প্রতিটা স্তরে গ্রহণ করিতে হইবে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি। এই ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করিবার গুরুত্বও সর্বাধিক।